Monday, October 3, 2011

ফ্রি-কিক!


বাসায় গ্যাস-পানি না থাকায় বাড়িওয়ালাকে নিয়ে ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম, আর সেটা দেখে ফেলেছিল তাঁর মেয়ে রাশিন। এরপর আরকি! নতুন বাসা খুঁজে বেড়াচ্ছি। রীতিমতো দৌড়ের ওপর আছি। ঈদটাও ঠিকমতো করতে পারলাম না। বাসা পাওয়া তো কোনো সহজ কথা নয়। এত টেনশন নিয়ে কি আর আনন্দ করা যায়?
ঝামেলা কমাতে তাই মারুফকেও বাসা খুঁজতে লাগিয়ে দিয়েছি। মারুফ খুবই ভালো ছেলে। অন্যের উপকারে জান দিতেও প্রস্তুত। সমস্যা একটাই, কথা বেশি বলে। আর কোথায় কী বলতে হয়, সেটাও বোঝে না। মারুফ একটা ভালো বাসার ব্যবস্থা করে ফেলবে, তা নিশ্চিত। কিন্তু বেশি কথা বলে আবার সেখানে কী গোল পাকায়, কে জানে!
নাশতা সেরে পিসিটা অন করেছি, তখনই মারুফের কল। সুখবর। ও নাকি দুই-দুইটা বাসা পেয়ে গেছে। আজ দেখাতে নিয়ে যেতে চায়। আমি ওকে বিকেলে আমার অফিসের নিচে অপেক্ষা করতে বলে ফেসবুকে লগইন করলাম। বেশ কয়েকটি মেসেজ আর নোটিফিকেশন আছে। মেসেজে ক্লিক করতেই চমকে উঠলাম, রাশিনের মেসেজ! আমার জন্য আরও চমক অপেক্ষা করছিল। খুবই উগ্র ভাষায় সে লিখেছে, ‘ওই! আপনাকে দেখি না কেন? ফেসবুকেও পাওয়া যায় না (রাগের ইমো)। শোনেন, জরুরি কথা আছে। বিকেলে আপনার অফিসের সামনে থাকবেন। আমি টাইমলি এসে তুলে নেব। ভয় পাবেন না! তুলে নেব মানে অপহরণ না, গাড়িতে তুলে নেওয়ার কথা বলেছি (ভেংচির ইমো)। আর হ্যাঁ, টাইমলি যদি না থাকেন, তো খবর আছে। এমন কিক মারব, আপনি হয়তো জানেন না, আমি ভিকারুননিসা ফুটবল টিমের স্ট্রাইকার ছিলাম (আবারও ভেংচির ইমো)!’
আমি ঢোঁক গিললাম। কী ভয়ংকর মেয়ে রে বাবা!
লিফট থেকে নেমে অফিস বিল্ডিংয়ের মূল গেটে আসতেই দেখি রাশিন দাঁড়িয়ে। আমাকে দেখেই বলে উঠল, ‘বসের ঝাড়ি খেয়েছেন আজ?’
‘ঝাড়ি খাব কেন? বস তো আর বাড়িওয়ালার মেয়ে না!’ মুখ ফসকে কথাটা বলেই মনে হলো, এই বুঝি রাশিন রেগে গেল। কিন্তু না। আমাকে চমকে দিয়ে সে হেসে ফেলল। বলল, ‘আমাকে এত ভয় পান কেন? আমি মেয়েটা একটু রাগী, কিন্তু অতটা খারাপ না। ভেবে দেখলাম, সেদিনের ব্যাপারটার জন্য সরি বলা উচিত। তাই দেখা করতে চাইলাম। আসলে সেদিন মেজাজটা এত খারাপ করে দিলেন!’
আমি একটু বিব্রতস্বরে বললাম, ‘না, আপনার সরি হওয়ার কিছু নেই। আসলেই তো, আমার ও রকম স্ট্যাটাস দেওয়া একদম ঠিক হয়নি। আসলে হঠাৎ মেজাজটা এমন খারাপ হলো!’
‘হুম। তাই বলে এত সব বন্ধুকে জানিয়ে স্ট্যাটাস দেবেন যে আমার বাবা গ্যাস-পানি দিচ্ছে না...’
‘আমি সত্যিই খুব দুঃখিত। এমনিতে অবশ্য আমি আমার বন্ধুদের সব সত্য কথাই বলি। যেমন: আমাদের বাড়িওয়ালা খুব ভালো মানুষ, খুবই হেল্পফুল। আন্টিও বেশ ভালো। আমাকে খুব পছন্দ করেন। সেদিন যে কেন ওটা লিখতে গেলাম!’
আমাকে থামিয়ে দিয়ে রাশিন জানতে চাইল, ‘আর আমার কথা কিছু বলেন না?’
‘বলি না মানে! আপনার মতো বুদ্ধিমতী আর মায়াবতী মেয়ে আমি যে খুব কম দেখেছি, সেটা তো প্রায়ই বলি! আরেকটা কথা বলি, এখন বলতে পারব না!’
‘আরে বলুন না, শুনি, প্লিজ!’
‘আর বলি যে, আপনি খুব সুন্দর!’
রাশিন একটু লজ্জা পেয়ে যায়। আহা! মেয়েটার এমন লাজুক মুখ তো আগে কখনো দেখিনি। আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল। বন্ধুদের কাছে তো আসলে এসব বলিনি, তবে কেন মিথ্যা কথাগুলো বললাম এতক্ষণ!
রাশিন বলল, ‘গাড়িতে চলুন। আপনাকে কোথাও খাওয়াব!’
‘কেন? প্রশংসা করায়?’
‘না। আজ আমার জন্মদিন। বার্থ ডে ট্রিট।’
রাশিনের উত্তরে আমি আবারও চমকে উঠলাম। বললাম, ‘সেকি! ফেসবুকে তো দেখলাম না!’
‘ফেসবুকে আমার বার্থ ডেট দেয়া নেই।’
আমি রাশিনকে ‘শুভ জন্মদিন’ বলে যেই না গাড়ির দিকে এগোচ্ছি, ঠিক তখনই সেখানে হাজির মারুফ। ভুলেই গিয়েছিলাম, এ সময় ওর আসার কথা। মারুফ এসেই স্বভাবমতো বেশি কথা বলা শুরু করল, ‘সরি, দোস্ত, একটু দেরি হয়ে গেল। আছিস কেমন? আরে এটা কে?’ বলে সে রাশিনকে দেখাল। তারপর জবাবের অপেক্ষা না করেই আবার বলতে লাগল, ‘তোর কলিগ বুঝি? স্লামালিকুম। ভালো আছেন?’
রাশিন হালকা হেসে উত্তর দিল, ‘জি। আপনি?’
মারুফ বলতে লাগল, ‘আমি তো আছি দৌড়ের ওপর। পাভেলের জন্য বাসা খুঁজছি। আর বলবেন না। ছেলেটা পড়েছে মহা বিপদে! বাড়িওয়ালার অত্যাচারে অবস্থা হালুয়া। গ্যাস দেয় না, পানি দেয় না। ভয়াবহ অবস্থা...’
আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার জোগাড়। মারুফকে এখন কেমনে থামাই। সে বলেই চলেছে, ‘শুধু তা-ই না, বাড়িওয়ালার এক মেয়েও আছে। সে আবার মহা দজ্জাল! তার জন্য শান্তিমতো ছেলেটা ফেসবুকিংও করতে পারে না। যে বাড়িতে এমন বাড়িওয়ালা আর তার মেয়ে আছে, সেখানে কি থাকা যায়, বলুন?’
রাশিন সেই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে জানতে চাইল, ‘এত কিছু আপনাকে কে বলেছে?’
আমি মারুফকে বিভিন্নভাবে ইশারায় বোঝাতে চাইলাম, যেন আমার কথা না বলে। কিন্তু সেসবের দিকে ওর খেয়াল থাকলে তো! সোজা বলে দিল, ‘কে আবার? ও-ই বলেছে। দুঃখে বলে, বুঝলেন, দুঃখে। অমন ডাইনি মেয়ে আছে যে বাড়িতে, সেখানে থাকার যে কী দুঃখ!’
রাশিন আমার দিকে কটমট করে তাকাল। আমি দেখলাম, তার পা দুটো কেমন যেন একটা পজিশন নিচ্ছে। ফ্রি-কিক নেওয়ার আগে ফুটবলাররা এমন ভঙ্গিতে পজিশন নেয়। আমার মনে পড়ে গেল, রাশিন ভিকারুননিসা স্কুলের ফুটবল টিমের স্ট্রাইকার ছিল।

All About Entertainment

No comments: