Saturday, December 20, 2014

সেকাল ও একালের রাজনীতি, তোফয়েল আহমেদ প্রকাশ : ১৭ অক্টোবর, ২০১৩ ১৬:৫৪:৩৬

তোফয়েল আহমেদ
প্রকাশ : ১৭ অক্টোবর, ২০১৩ ১৬:৫৪:৩৬

অনেকেই প্রশ্ন করেন, সেদিনের অর্থাৎ আমাদের যুগের রাজনীতি কেমন ছিল? আসলে সেদিনের রাজনীতিই ছিল সত্যিকারের রাজনীতি। আমদের ছাত্রাবস্থায় তখন যারা রাজনীতি করতেন, তাদের ব্যক্তিগত লোভ-লালসা, চাওয়া-পাওয়া কিছু ছিল না। রাজনীতির সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য-আদর্শ ছিল। কতো কষ্ট, ত্যাগ স্বীকার করে আমরা ছাত্রলীগকে প্রতিষ্ঠা করেছি। ডাকসুর ভিপি ছিলাম, ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলাম। অথচ এমন দিন গেছে অফিস ভাড়া দিতে পারিনি। আমাদের সামনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছিল, জাতীয় মুক্তি অর্জনের লক্ষ্য ছিল। আমাদের জীবনে কোনো বিলাসিতা ছিলো না। শৈশব থেকে বিকশিত জীবনের স্মৃতিময় দিনগুলোই তার সাক্ষ্য বহন করে।

ছেলেবেলা থেকেই আমি লেখাপড়ায় বেশ মনোযোগী ছিলাম। প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রাইমারী স্কুলের ছাত্র হিসেবে পড়াশোনা শুরু করি। তখন প্রত্যেকটি ক্লাশে প্রথম হতাম। বর্ষাকালে কর্দমাক্ত পথে খালি পায়ে স্কুলে যেতাম। কিন্তু স্কুলে যাওয়া আসা কষ্টকর ছিল। এ বয়সের একটি ছেলেকে ৭ মাইল পথ পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতে হতো। বাধ্য হয়ে প্রথমে আমার এক আত্মীয়ের বাড়িতে এবং পরবর্তীতে তিনটি বাড়িতে লজিং থাকতে হয়েছে। অপরের বাড়িতে লজিং থেকে পড়াশোনা করতে হয়েছে। তারা আমাকে খুবই ভালবাসতেন। যখন আমার বয়স ১৩, তখন বাড়ির পাশে খায়েরহাট হাই স্কুলে ভর্তি হই। নিয়মিত বির্তক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতাম।


আমি তখন সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। এরপর ভর্তি হই বোরহানউদ্দিন হাই স্কুলে। সেই স্কুলেও ক্লাশে প্রথম স্থান অধিকার করি। আমার যারা শ্রদ্ধেয় শিক্ষক তারা আমাকে খুবই আদর করতেন। আমার শিক্ষকরা ভোলা সরকারী স্কুলে ভর্তি হওয়ার পরামার্শ দিলেন। আমি ভর্তি পরীক্ষা দিলাম। আজকালের মতো তখন সুপারিশে ভর্তি হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। আমরা শতাধিক ছেলেমেয়ে পরীক্ষা দেই। চারটি মাত্র সিট খালি ছিলো সেখানে। আমি প্রথম স্থান অধিকার করি। এই ভোলা সরকারী স্কুলে ভর্তি হয়ে হোস্টেলে থাকতে শুরু করি।

ভোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বক্তৃতা শুনে আমি নিজেও পথ চলার সময় একা একা বক্তৃতা দেওয়ার চেষ্টা করতাম। পরবর্তীকালে আমার জীবনে তা কাজে লেগেছে। এরই মধ্যে অর্থাৎ অষ্টম শ্রেণীতে অধ্যয়নকালে আমার জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনা আছে। ১৯৫৭ সনে ভোলায় উপনির্বাচন হয়েছিল। সেই নির্বাচনী সমাবেশে নেতৃবৃন্দ এসেছিলেন সী প্লেনে করে। ইলিশা নদীতে সেই প্লেন অবতরণ করেছিল। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ১৩টি আসনে উপ-নির্বাচন হয়। ১২টি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়লাভ করলেও ভোলায় আওয়ামী লীগ জিততে পারেনি। নেজামে ইসলামের প্রার্থী শাহ মতিউর রহমান বিজয়ী হয়েছিলেন। তখন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর সাথে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রিয় নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু তখন শেখ মুজিব। তখন প্রিয় নেতাকে সবাই ‘মুজিব ভাই’ বলে সম্বোধন করতেন।

ভোলা সরকারী স্কুল মাঠে বিশাল জনসভা। প্রায় লক্ষাধিক লোক সমবেত হয়েছিল সে জনসভায়। সোহরাওয়ার্দী সাহেবের বক্তৃতার আগে বঙ্গবন্ধু বক্তৃতা করলেন। সে কী সুন্দর বক্তৃতা! তিনি যখন বক্তৃতা শুরু করলেন, পুরো জনসভায় নেমে এলো পিনপতন নিস্তব্ধতা। মনে আছে নির্নিমেষ দৃষ্টিতে মন্ত্রমুগ্ধের মতো বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা শুনেছি। বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা শুনেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যদি কোনদিন রাজনীতি করি তাহলে এই নেতার রাজনীতিই করবো। কারণ রাজনীতি করবো এটা তো চিন্তার মধ্যেও ছিল না। রাজনীতির এই চিন্তা সেদিন থেকেই মাথায় প্রবিষ্ট হয়েছিল। আর এতে যিনি উৎসাহ যুগিয়েছিলেন তিনি আমার বন্ধু, মোস্তাফিজুর রহমান কবু। বাড়ী গোপালগঞ্জ। আমার এই বন্ধুবর অষ্টম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত অবস্থায়ই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। মূলত তিনিই আমাকে ছাত্রলীগের রাজনীতি করার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করেছেন, পরামর্শ দিয়েছেন। এবং আমিও ছাত্রলীগের প্রথমে একজন সমর্থক, পরে সক্রিয় কর্মী হয়ে উঠি।

১৯৬০ সনে ম্যাট্রিক পাশ করে ব্রজমোহন কলেজে ভর্তি হই। আমার অগ্রজ নেতা আমির হোসেন আমু আমার সঙ্গে হোস্টেলে দেখা করে আমাকে ছাত্রলীগের সদস্য করলেন। মূলত সেই থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে রাজনীতির শুরু। প্রথমে হয়েছি ক্লাশ প্রতিনিধি, তারপর ক্রীড়া সম্পাদক। আমাকে ভিপি পদের জন্য মনোনয়ন দিতে চাইলে আমি তাতে আগ্রহ দেখাইনি। কারণ আমি চেয়েছিলাম ডাক্তার হবো। রাজনীতিতে পা রাখার পর আর ডাক্তার হয়ে ওঠা হয়নি। যদিও এখন আমার পরিবারে অনেক ডাক্তার। আমার একমাত্র মেয়ে ডাক্তার, জামাতা ডাক্তার।

বিএম কলেজ থেকে বিএসসি পাশ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএসসিতে মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হই। সেখানে প্রথমে বিভাগের ভিপি; এরপর ইকবাল হলের (বর্তমানে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ভিপি; পরে ডাকসু ভিপি। তারপর ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হলাম। ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে রাজনৈতিক জীবনের শুরু। তারপর ধাপে ধাপে অগ্রসর হয়ে আজ আমি এই জায়গায় পৌঁছেছি। প্রথমে ক্লাশ রিপ্রেজেন্টেটিভ, ক্লাশ ক্যাপ্টেন, স্কুল ক্যাপ্টেন, পরে যথাক্রমে ছাত্রলীগের অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারী, অ্যাডমিন সেক্রেটারী, ব্রজমোহন কলেজের ক্রীড়া সম্পাদক, ইকবাল হলের (বর্তমানে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ক্রীড়া সম্পাদক, পরে হলের জিএস হিসেবে দাঁড়ালাম, তারপরে হলের ভিপি, এরপর আমার ডিপার্টমেন্ট সোয়্যাল সায়েন্সের ভিপি, পরে ডাকসুর ভিপি, ছাত্রলীগের সভাপতি, এরপর ১৯৭০-এর ৭ জুনে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে দলের সদস্যপদ গ্রহণ।

১৯৬৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। সেদিন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)’র সহ- সভাপতি নির্বাচিত হই। তখন ৬ দফার আন্দোলন চলছে। বঙ্গবন্ধু কারাগারে অন্তরীণ। সেদিন রাতেই তাঁর কাছ থেকে একটা গোপন পত্র পাই। সেটাই বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে পাওয়া প্রথম চিঠি। তিনি লিখেছেন, “স্নেহের তোফায়েল, তুই ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হওয়ায় আমি খুব খুশি হয়েছি। আমি বিশ্বাস করি, এই ডাকসুর নেতৃত্বে বাংলাদেশে একটি আন্দোলন গড়ে উঠবে Ñ মুজিব ভাই।”

একই বছরের শেষে সামরিক সরকার বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করার জন্য তাঁকে প্রধান আসামী করে “আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা” দায়ের করে ঢাকা সেনানিবাসের একটি রুদ্ধদ্বার কক্ষে আটকে রাখে। এর প্রতিবাদে ১৯৬৮-এর ২৬ ডিসেম্বর ডাকসুর পক্ষ থেকে আমি সহ-সভাপতি এবং নাজিম কামরান চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমরা সমগ্র পাকিস্তানে আয়ুব খানের বিরুদ্ধে কালো পতাকা উত্তোলন ও প্রদর্শনের কর্মসূচী গ্রহণ করেছিলাম। বাঙালির মুক্তি আন্দোলনে আমাদের সেদিনকার সিদ্ধান্ত ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে অক্ষয় হয়ে আছে।

ছাত্রলীগ এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ আমার প্রাণের সংগঠন। স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, ঐতিহাসিক ৬ দফার বিপুল জনপ্রিয়তা এবং সর্বোপরি ’৪৭ থেকে বঞ্চিত নির্যাতিত বাঙালির জাতীয় মুক্তির আন্দোলনে হতাশা, শঠতা ও ভাওতাবাজির বিপরীতে একমাত্র ছাত্রলীগই বঙ্গবন্ধু মুজিবের নির্দেশে সমমনা অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলোকে একটি প্ল্যাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ করে পালন করেছিল এক ঐতিহাসিক ভূমিকা।

এরই ধারাবাহিকতায় ’৬৯-এর ৪ জানুয়ারি  ছাত্রলীগের ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে ‘ডাকসু’ কার্যালয়ে আমার সভাপতিত্বে এবং চার ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে এক সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম “কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ” গঠন করে ছয় দফা দাবী আদায়ে এবং বঙ্গবন্ধুকে কারামুক্ত করতে বাংলার সর্বস্তরের মানুষসহ আমরা যারা ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম তারা ছয় দফাকে দাড়ি, কমা, সেমিকোলনসমেত এগারো দফায় অন্তর্ভূক্ত করে  ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি ঘোষণা করি।

আমরা জানতাম আমাদের ১১ দফায় ধারিত আছে গণমানুষের আকাক্সক্ষাবোধ। আমরা অনেক নেতার কাছেই গিয়েছিলাম এই ১১ দফা সমর্থন করার আবেদন নিয়ে। আমার এখনো মনে আছে আহমেদুল কবীর সাহেবের বাসভবনে যখন ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন কমিটির (ডাক) সভা চলছিল সেদিন আমরা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কয়েকজন সেখানে উপস্থিত ছিলাম। আমরা তাঁদের কাছে বলেছি যে, “আমরা সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেছি। আমরা বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সহ সকল রাজবন্দীর মুক্তির জন্য, আইয়ুব শাহীর পতনের জন্য এবং গণতন্ত্রের জন্য ১১ দফা প্রণয়ন করেছি। আমরা আপনাদের সমর্থন চাই।” সেদিন ডাকের অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের আইয়ুব বিরোধী নেতা মাহমুদ আলী কাসুরী।

তিনি সব দেখে শুনে বললেন, তোমরা শেখ মুজিবের ৬ দফাও তোমাদের ১১ দফায় অন্তর্ভুক্ত করেছো, সুতরাং তোমাদের ১১ দফা গ্রহণ করার বিষয়টি প্রশ্ন সাপেক্ষ। সরাসরিই তিনি বলতে গেলে আমাদের প্রত্যাখ্যান করলেন। আমরাও সাথে সাথে জানিয়ে দিলাম যে, আমরা আপনাদের সমর্থন চাইবার জন্য এসেছিলাম মাত্র। এর অর্থ এই নয় যে, আপনারা সমর্থন না করলে আমাদের ১১ দফা ভিত্তিক সংগ্রাম চলবে না। অবশ্যই চলবে এবং আমরা ১১ দফার সংগ্রাম অবশ্যই চালিয়ে যাবো। আমি বলেছিলাম, বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ যখন কোন দাবীর জন্য দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয় তখন পৃথিবীর কোন শক্তি নেই যে তা স্তব্ধ করতে পারে। ’৫২তেও দেশের সংগ্রামী ছাত্র সমাজ এমনি একবার ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে এবং তা অর্জিত হয়েছিল।

তেমনি তথাকথিত আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে আমাদের প্রিয় নেতা শেখ মুজিবকে যতদিন মুক্ত না করতে পারবো ততদিন ঘরে ফিরে যাবো না-আমরা অবশ্যই রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে ১১ দফা বাস্তবায়ন করবো। প্রয়োজনে আমরা আমাদের বুকের শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে লড়াই করে যাবো। সেদিন সেই বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে সৈয়দ নজরুল ইসলাম-যিনি আজ আমাদের মধ্যে নেই, স্বাধীন বাংলাদেশে যাঁকে কারাপ্রকোষ্ঠে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল-তিনি বেরিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন, অশ্রুসিক্ত চোখে তিনি আমাকে বুকে টেনে নিলেন এবং বললেন, “আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমরা ছাত্রদের ১১ দফার প্রতি সমর্থন জানাচ্ছি। তোমরা এগিয়ে যাও। তোমরা একা নও। তোমাদের পাশে আর কেউ না থাকুক আওয়ামী লীগ থাকবেই।”

১৯৪৮-এর ১১ মার্চের ভাষা আন্দোলনের মধ্যদিয়ে ছাত্রলীগের যে জয়যাত্রা সূচিত হয়েছিল, ’৫২-এর একুশে ফেব্রুয়ারির মহান ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ’৫৬-এর সংবিধান বিরোধী আন্দোলন, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৪-এর সাম্প্রদায়িক-দাঙ্গা প্রতিরোধ আন্দোলন, ’৬৬-এর ৭ জুনে স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকারের জন্য ছয় দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর মহান গণআন্দোলন-গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর সাধারণ নির্বাচন এবং ’৭১-এ মহত্তর মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগ পালন করে অগ্রগামী কা-ারীর ভূমিকা।

বিশেষ করে মাতৃভাষার অধিকার, স্বাধিকার, সার্বজনীন ভোটাধিকার ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগের একচ্ছত্র নেতৃত্ব ইতিহাস হয়ে আছে। এসব মহিমান্বিত সংগ্রামের মধ্যদিয়ে ছাত্রলীগ অর্জন করেছিল গণতান্ত্রিক তথা  নিয়মতান্ত্রিক আচরণ ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং জয় করে নিয়েছিল বাংলার মানুষের হƒদয় আর সৃষ্টি করেছিল ইতিহাস। সুনির্দিষ্ট আচরণ বিধি, নিয়মানুবর্তিতা, সংগঠনের আদর্শ-উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের প্রতি অবিচল নিষ্ঠা ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে নেৃতত্বের প্রতি আনুগত্যের মধ্যদিয়ে ছাত্রলীগ সৃষ্টি করেছিল অসংখ্য বিপ্লবী ও সংস্কৃতবান নেতাকর্মী। অতীতে আমাদের সময়ে কোনো বহিরাগত-অছাত্র ছাত্রলীগের সদস্য হতে পারতো না, নেতৃত্বের পর্যায়ে যাওয়া তো অসম্ভব।

ছাত্রলীগের সম্মেলন গঠনতন্ত্র মোতাবেক প্রতি বছর ২১ মার্চের মধ্যে সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা ছিল। তা না হলে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটির কাছে নেতৃত্ব তুলে দিতে হতো। এটাই ছিল বিধান এবং গঠনতান্ত্রিক বিধি-বিধানের অন্যথা হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। বিধান মোতাবেক ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পরে আমি ছাত্রলীগের সভাপতি এবং আসম আব্দুর রব সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে এক বছর পরে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২১ মার্চের মধ্যে সম্মেলন করে নূরে আলম সিদ্দিকী এবং শাজাহান সিরাজের কাছে নেতৃত্বের দায়িত্ব অর্পণ করে আমাদের কমিটি বিদায় নেই এবং ২২ মার্চ হল ত্যাগ করি।

সমগ্র ’৫০ ও ’৬০-এর দশক জুড়ে ছাত্রলীগ জাতীয় মুক্তির সংগ্রামে শামিল হয়ে যে রাজনৈতিক আদর্শ ও চেতনা অর্জন করেছিল তা সংরক্ষণ, লালন ও অব্যাহত চর্চা আজ সময়ের দাবী। আজ অতীতের সেই সোনালী দিনগুলোর দিকে যখন ফিরে তাকাই স্মৃতির পাতায় দেখি, সেদিনের ছাত্রলীগ ছিল বাংলার গণমানুষের অধিকার আদায়ের, মুজিবাদর্শ প্রতিষ্ঠার অগ্রবর্তী সংগঠন। আমি ছাত্রলীগের একজন কর্মী ছিলাম বলে গর্ববোধ করি। সংগঠনের কর্মী হিসেবে ছাত্রলীগ আমাকে মুজিবাদর্শ ধারণ করে রাজনীতি করার পথই শুধু উš§ুক্ত করে দেয়নি, সেইসাথে দেশসেবার ও দেশগঠনের মহতী কর্মে আজীবন প্রয়াসী থাকার সুযোগ অবারিত করে দিয়েছে।

ছাত্রলীগ করার দরুনই গরীব-দুঃখী-নিরন্ন মানুষের সেবায় নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পেরেছি। বর্তমান ছাত্র-যুব রাজনীতির নেতাকর্মী এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আজ একটি কথাই বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, আমাদের কাল তথা ষাটের দশকের রাজনৈতিক অতীত গৌরবময়। এর বর্তমানকে করে তুলতে হবে আরও তাৎপর্যপূর্ণ। আর ভবিষ্যতের জন্য নিজেদেরকে গড়ে তুলতে হবে প্রতিশ্রুতিশীল হিসেবে। দুঃখের সাথে বলতে হয়, অতীতে ছাত্র রাজনীতির যে মর্যাদা আমরা পেয়েছি, বর্তমানে সে মর্যাদার অনেকটাই এখন আর নেই। এও এক ষড়যন্ত্রের ফল।

ছাত্র সমাজ অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক নির্লোভ ত্যাগী শক্তি বলে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রী মহল তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার নানা ষড়যন্ত্র করেছে। দু’বারের সামরিক শাসন মাদক, অস্ত্র আর অর্থ ঢেলে ছাত্রসমাজের চরিত্র হননের চেষ্টা করেছে। আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশ ছাত্রলীগসহ অপরাপর সমমনা প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমূহ এ কুৎসিত ষড়যন্ত্র থেকে নিজেদের রক্ষা করে ছাত্র আন্দোলনের সুমহান ঐতিহ্যকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে এগিয়ে যাবে।

’৬৯-এ বঙ্গবন্ধু কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করার পর সব সময় আমাকে সাথে রাখতেন। আমি তাঁর গাড়ীতে বসতাম। এতো বেশি স্নেহ করতেন, আদর করতেন, কতবার কপালে চুমু দিয়েছেন, বুকে টেনে নিয়েছেন তা ভাবতেই চোখ ভারী হয়ে আসে। তাঁর কাছে যে আমি কত ঋণী তা কোনোদিন পরিশোধ করতে পারবো না। ’৭০-এর ২৪শে ফেব্রুয়ারি, বঙ্গবন্ধু ভোলা গিয়েছিলেন। ভোলার জনসভায় মানুষের কাছে আমাকে এমনভাবে তুলে ধরেছিলেন। একজন নেতা তাঁর সামান্য কর্মীকে বড় করার জন্য কতো কথা তিনি বলেছিলেন। সেসবই এখন সোনালী অতীত।

এসব আজ রাজনীতি থেকে হারিয়ে গেছে। কোথায় হারিয়ে গেল। সেদিন তিনি বলেছিলেন, “এই তোফায়েল ভোলায় জš§গ্রহণ করেছে, ভোলার মানুষ ধন্য।” ’৭০-এর ৭ই জুন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আওয়ামী লীগে যোগদান করি। একদিন বঙ্গবন্ধু আমায় ডেকে বললেন, “তোফায়েল তুই ভোলা যা। বিভিন্ন স্থানে জনসভা কর। আমি তোকে আওয়ামী লীগ থেকে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে মনোনয়ন দেব।” স্তম্ভিত হলাম। এ আমি কখনো চিন্তা করিনি, স্বপ্নেও ভাবিনি। আমার বৃদ্ধ পিতাকে যখন জানালাম যে, বঙ্গবন্ধু আমাকে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ থেকে মনোনয়ন দেবেন। বাবা বললেন, “আমার পরিবার থেকে কেউ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য পর্যন্ত হতে পারেনি। তুই হবি পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের সদস্য।” অতঃপর ’৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে ভোলা-দৌলতখাঁ-তজুমুদ্দী-মনপুরা আসন থেকে আমাকে মনোনয়ন দেন। মাত্র ২৭ বছর ১ মাস ১৫ দিন বয়সে এ আসন থেকে আমি জাতীয় পরিষদে নির্বাচিত হই।

মনে পড়ে, ১২ নভেম্বর, ১৯৭০-এর কথা। যখন জলোচ্ছ্বাস হয় তখন আমি এবং প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য মোশারফ হোসেন শাজাহান, আমরা দুই ভাইয়ের মতো একত্রে কাজ করেছি। কত মানুষ সেই প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে মৃত্যুবরণ করেছে। এভাবেই প্রিয় স্কুলের গন্ডী পেরিয়ে ভোলার সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে অবশেষে জাতীয় রাজনীতিতে আমার অধিষ্ঠান সম্ভবপর হয়েছে।

১৯৭৫-এর ১৫ই আগস্ট জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করার পরে রাজনীতিবিদদের হাত থেকে রাজনীতি ছিনতাই হয়ে গেলো। স্বাধীন বাংলাদেশে নেমে এলো সামরিক শাসন। যারা কোনোদিন রাজনীতি করেনি, জেলজুলুম অত্যাচার সহ্য করেনি, স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরোধীতা করেছেÑ বেছে বেছে তাদেরকে রাজনীতিতে এবং রাষ্ট্র ক্ষমতায় পুনর্বাসিত করা হলো। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে আমি ৩৩ মাস কারাগারে ছিলাম। এরপর আরো কয়েকবার গেছি। নানাভাবে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে, ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছি। অমানুষিক কারানির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে; শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে; কিন্তু আদর্শ এবং দলের বাইরে যাই নাই।

কিন্তু সামরিক শাসকরা আমাদের রাজনীতি তছনছ করে দিয়ে গেছেন। আজ ২২ বছর যাবত ডাকসু নির্বাচন হয় না। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না। যা নেতা তৈরির কারখানা বলা হয়ে থাকে। কোথায় সেসব রাজনৈতিক সংস্কৃতি হারিয়ে গেলো। তরুণ সমাজ কিভাবে রাজনীতিকে আসবে? জিয়াউর রহমান দাম্ভিকতার সঙ্গে বলেছিলেন, “আমি রাজনীতি রাজনীতিবিদদের জন্য কঠিন করে দিয়ে যাবো।” সত্যি তিনি তাই করে দিয়েছেন। তৃণমুল থেকে একজন মানুষকে বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে তৈরি করতেন। তৃণমুল থেকে নিয়ে এসে কেন্দ্রের নেতা, জাতীয় নেতায় পরিণত করতেন। তিনি নিজেও তৃণমুল থেকে এসে এক সময় আওয়ামী লীগের নেতা, তারপর জাতীয় নেতা এরপর বঙ্গবন্ধুতে পরিণত হন। জাতির পিতা হয়েছেন। সারাদেশে সামান্য কর্মীদেরকে বড় করে নিজে বড় হয়েছেন। কাকে, কখন, কোথায় কী দায়িত্ব দিতে হবে সেটা বঙ্গবন্ধু জানতেন। যার যা প্রাপ্য তাকে তা দিতেন। যে কারণে বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় চারনেতাদের সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, কামারুজ্জামানÑ স্মরণ করি। বঙ্গবন্ধুর চারপাশে চারনেতা বসতেন।

বঙ্গবন্ধু যখন কোনো সিদ্ধান্ত নিতেন, তখন তাদের সঙ্গে পরামর্শ করতেন। এবং আমরা যারা ছাত্রনেতা থেকে যুবনেতা হয়েছি, তাদেরকেও ডেকে পরামার্শ নিতেন। বিভিন্ন ফোরামের সঙ্গে আলোচনা করেও সিদ্ধান্ত নিতেন বলেই তার জীবনে রাজনৈতিক কোনো সিদ্ধান্ত ভুল হয়নি। সে কারণে তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতেন। একবার যে সিদ্ধান্ত নিতেন ফাঁসির মঞ্চে গিয়েও তা পরিবর্তন করতেন না। বাংলার স্বাধীনতা দিতে পেরেছেন। আজকে সুবিধাবাদের রাজনীতিতে ছাত্র রাজনীতি হারিয়ে গেছে। যুব রাজনীতি হারিয়ে গেছে। আজকে চাওয়া পাওয়ার রাজনীতি। আজকে লক্ষণীয় বিষয়, ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ৬ দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে তরুণরাই আন্দোলন করেছিলো। হাতিয়ার তুলে নিয়ে যুদ্ধ করেছিলো।

আজকে তরুণ সমাজ আবার জেগে উঠেছে। তরুণ সমাজ বুঝতে শিখেছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় কিভাবে ৩০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। কিভাবে মায়ের সামনে মেয়েকে, ভাইয়ের সামনে বোনকে পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, যে দেশের তরুণ সমাজ বুঝতে পারে স্বজাতির বীরত্বপূর্ণ ইতিহাস; ’৭১-এর গণহত্যা কাকে বলে, সেই দেশ এগিয়ে যাবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। সুতরাং, অতীতের রাজনীতি থেকে শিক্ষা নিয়ে সঠিক পথে চলতে হবে। আমাদের পাঁচ বছর মেয়াদের শেষ বছর। যে কোনো মূল্যে আমাদের নির্বাচনী ওয়াদা পূরণ করতে হবে।

সরকারের শেষ বছরে বিরোধী দল নানা কর্মসূচি দিয়ে মাঠে রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করতে চায়। বাংলার মানুষ খুবই সচেতন। যারা চলন্ত বাসে আগুন দিয়ে নিরীহ মানুষ হত্যা করে। হরতালের নামে গাড়ী পুড়িয়ে আতঙ্ক ছড়ায়। যেভাবে পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিরস্ত্র মানুষের ঘর-বাড়ী আক্রমণ করা হয়, দেশব্যাপী অরাজকতা করা হয়। সেইসব অপশক্তির বিরুদ্ধে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাড়াবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। অতীতে আমরাও ছাত্রজীবনে হরতাল করেছিলাম। রাস্তায় নেমে পিকেটিং করতে হয়নি। কারণ আমাদের কর্মসূচী ছিল জনগণের কর্মসূচি।

আমরা জনগণকে বলতাম হরতাল কর; তারা হরতাল করতো। যখন বলতাম, কালোব্যাজ ধারণ কর, তাহলে তাই করতো। যখন বলতাম, মশালের নগরী হবে ঢাকা; তাহলে তাই হতো। যদি বলতাম, পাকিস্তানের পতাকা উড়বে না। ১৯৭১-এর ২৩শে মার্চ বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিলো। বাংলার মানুষ তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যদি সংগ্রাম করে তাহলে তাদের আন্দোলন সফল হয়।

আজকে একটি জাতীয় সংসদ কার্যকর করা হচ্ছে না। যদি অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে সংসদকে কার্যকর করতো, তাহলে বাংলার মানুষের অগ্রগতি হতো, দেশ আরো সমৃদ্ধ হতো। রাজপথে হানাহানি হতো না। পুলিশের ক্যাম্পে ঢুকে পুলিশকে হত্যা করা হয়। আজকে সাতক্ষীরায় একজন নিরীহ কলেজ শিক্ষক, ছাত্রলীগের নেতা মামুনকে যেভাবে হত্যা করা হলো তাদের এই রাজনীতি মানুষ গ্রহণ করবে বলে আমি বিশ্বাস করি না। সুতরাং, বাংলার মানুষ কোনোদিন ভুল করে না। ’৬৬তে করেনি, ’৬৯-এ করেনি, ’৭১-এ করেনি এবং পরবর্তীকালেও করেনি। বাংলার মানুষ সঠিক পথে থেকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

জাতীয় রাজনীতিতে আমাদের যা কিছু অর্জন তা সমূলে ধ্বংস করেছেন জেনারেল জিয়া।   গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে এথিকস বলে একটা কথা আছে। রাজনীতির সেই এথিকস তথা নৈতিকতাকে সমূলে উৎপাটন করা হয়েছিল। গণতান্ত্রিক এথিকস সম্পর্কে ১৯৭২-এর ৪ঠা নভেম্বর বাংলাদেশ গণপরিষদে সংবিধান গৃহীত হওয়ার প্রাক্কালে জাতির জনক তাঁর বিখ্যাত বক্তৃতায় বলেছিলেন, “গণতন্ত্রে মৌলিক অধিকার ব্যবহার করতে হবে। তার জন্যে এথিকস মানতে হবে। তা না হলে এথিকস ইমপোজ করতে হয়।

গণতন্ত্রের যে অধিকার তা কেবল চেঁচিয়ে বেড়ালে হয় পালন করা হয় না, বক্তৃতা করলে হয় না।” এই যে গণতান্ত্রিক এথিকস এটা রাজনীতির জন্য অনেক বড় বিষয়। বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে এথিকস হারিয়ে গেছে। আর সেজন্যই রাজনীতি হয়েছে কলুষিত। এটি সম্ভবপর হয়েছে সামরিক স্বৈরশাসকদের জন্য। তাদের একনায়কসুলভ কর্মকা-ের ফলে গণতান্ত্রিক রাজনীতি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।

তবু আশার কথা এই যে, আজকে তরুণ প্রজš§ যারা কথা বলতে শিখেছে, অসত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে শিখেছে। সেই সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ ব্যাহত করতে পারবে না। স্বাধীন বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা হবেই হবে। এ আমার সুদৃঢ় বিশ্বাস।

লেখক: আওয়ামী লীগ নেতা, সংসদ সদস্য, সভাপতি, শিল্প মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। tofailahmed69@!gmail.com

No comments: